নিজস্ব প্রতিবেদক : একটি টিপি লিং রাউডারের মূল্য ১ লাখ ৩৬ হাজার ৫শ’ টাকা নির্ধারণ করে টেন্ডার আহ্বান করা লক্ষ্মীপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সেই ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জহিরুল ইসলাম এখনও প্রতিষ্ঠানটিতে বহাল তবিয়তে রয়েছেন।
দুর্নীতি দমন কমিশন দুদকের অভিযানের পর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জহিরুল ইসলাম দরপত্রের সাথে মিলিয়ে প্রতিষ্ঠানটিতে বিভিন্ন সরঞ্জাম ক্রয় করে দুর্নীতি ঢাকার চেষ্টায় করছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এর আগে (গত ৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নিয়মবহির্ভূত টেন্ডার প্রক্রিয়া এবং কয়েক কোটি টাকার কেনাকাটায় বড় ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর প্রতিষ্ঠানটিতে তদন্তে করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সেখানে প্রতিষ্ঠানটির জন্য যন্ত্রাংশ কেনার ক্ষেত্রে বাজারমূল্যের চেয়ে প্রতিটি সরঞ্জামের দাম ১০ থেকে ৯০ গুণ পর্যন্ত বেশি দেখানো হয় বলে অভিযোগ উঠে।
সূত্রে জানা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ল্যাবের যন্ত্রাংশ কেনায় বরাদ্দ ছিল ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। কর্তৃপক্ষ কেনাকাটার যে তালিকা দেখিয়েছেন, সেখানে প্রকৃত বাজারদরের সঙ্গে বড় ধরনের গরমিল পাওয়া গেছে। রশিদে টিপি লিংক ব্র্যান্ডের ডব্লিউআর ৮৪০ মডেলের একটি রাউটারের দাম দেখানো হয়েছে ১ লাখ সাড়ে ৩৬ হাজার টাকা। অথচ এটির বাজারমূল্য মাত্র ১৩৩০ টাকা! একই ব্র্যান্ডের আরেকটি ডব্লিউটি ৮৪১এন মডেলের তিনটি রাউটার কেনা হয়েছে ২০ হাজার টাকা করে মোট ৬০ হাজার টাকায়। বাজারে এর একটির দাম ১ হাজার ৫৫০ টাকা।
এ ছাড়া আর্চার সি২০ মডেলের ওয়াইফাই রাউটার সাতটির মূল্য ধরা হয়েছে ২৪ হাজার ৫০০ টাকা। কিন্তু এই মডেলের রাউটারের বাজারমূল্য ২ হাজার থেকে ২২০০ টাকার মধ্যে। ডি লিংক নেটওয়ার্কিং কেবল টেস্টার দুটির দাম ধরা হয়েছে ৩ হাজার করে ৬ হাজার টাকা। যার প্রত্যেকটির বাজারমূল্য ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে ৭০০ টাকার মধ্যে।
পিসি ও নেটওয়ার্ক মেইনটেনেন্স টুলস কিট দুটির দাম ধরা হয়েছে ১১ হাজার টাকা। যেখানে একটির দাম পড়েছে সাড়ে ৫ হাজার টাকা। একই টুলস কিট ১ হাজার ৪৫০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়।
এ ছাড়া অপটিক্যাল স্প্লিসার মেশিন কেনা হয়েছে ৬ হাজার টাকায়। যার প্রকৃত বাজারমূল্য সাড়ে ৩ হাজার টাকা। সাইনটেক ২৫০ওয়ানএ অপটিক্যাল ফাইবার কমিউনিকেশন সিস্টেম ট্রেইনারের মূল্য ধরা হয়েছে তিন লাখ ২০ হাজার টাকা। যদিও এটির বাজার মূল্য ১ লাখ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকার মধ্যে।
এদিকে ১২টি কম্পিউটার কেনা হয়েছে, যার প্রত্যেকটিতে ২৫ হাজার টাকা বেশি খরচ দেখানো হয়েছে। এইচপি ১৩৫ডব্লিউ ব্র্যান্ডের প্রিন্টার উইথ স্ক্যানারের বাজারমূল্য ২০ থেকে ২১ হাজার টাকা হলেও তারা কিনেছেন ৩০ হাজার টাকায়। এ রকম তিনটি প্রিন্টার কেনা হয়েছে। বেনকিউ আরই৬৫০১ মডেলের চারটি ডিজিটাল ইন্টারেকটিভ হোয়াইটবোর্ডের দাম পড়েছে ১৫ লাখ ২০ হাজার টাকা। যার প্রত্যেকটি কেনা হয়েছে ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকায়। অথচ একই মডেলের হোয়াইটবোর্ড বাজারে পাওয়া যায় ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকায়। আর অটোডেস্ক ২০০৭ মডেলের অটোকার্ড প্রোগ্রামের মূল্য ৫ হাজার টাকা ধরা হয়েছে, যদিও এর মূল্য ৭৯৯ টাকা মাত্র।
এ বিষয়ে লক্ষ্মীপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, দুদক প্রতিষ্ঠানটিতে আসার পর আমার কাছে টেন্ডার সংক্রান্ত কিছু কাগজপত্র ছেয়েছে। সেগুলো দিয়েছি।
দুদক চাঁদপুর কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আতাউর রহমান বলেন, লক্ষ্মীপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে কেনাকাটায় দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদন আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে দিয়েছি। বিস্তারিত সচিব মহোদয় বলতে পারবেন।