অনলাইন ডেস্ক: লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জে আওয়ামীলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে ৫ পুলিশসহ অন্তত ১৫ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বুধবার (৮ মার্চ) রাতে চন্দ্রগঞ্জ পশ্চিম বাজারে এ ঘটনা ঘটে।
ঘটনার পর থেকে চন্দ্রগঞ্জ বাজারে থমথমে পরিস্থিতি ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাজারে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ঘটনায় অন্তত ১২ জনকে আটকের কথা জানায় পুলিশ।
আটককৃত হলেন- ইউপি প্যানেল চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সফিকুল ইসলাম শিফন খলিফা, ছাত্রলীগ নেতা রিয়াজ হোসেন জয় ও এম সজীবসহ অন্তত ১২ জন।
চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী সোলায়মান ও ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আমিন সমর্থকরা এ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন।
আহতরা হলেন, গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) এসআই জাকির হোসেন, চন্দ্রগঞ্জ থানার এসআই আব্দুর রহিম ও কনস্টেবল মোজাম্মেল হোসেন এবং ছাত্রলীগ কর্মী আকবর হোসেন, আব্দুর রহমান, হাসান, রাজু ও রাজিবসহ অন্তত ১৫ জন। এমধ্যে আকবর হোসেনকে গুরুত্বর অবস্থায় জেলার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদিকে আহত পুলিশ সদস্যদের দেখতে সদর হাসপাতালে ছুটে যান পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মাহফুজ্জামান আশরাফ।
জানা গেছে, বিগত ইউপি নির্বাচনে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল আমিন দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী ভোট করলে তাকে দল থেকে বহিস্কার করা হয়। এরপর সিনিয়র সহ-সভাপতি গিয়াস উদ্দিন লিঠনকে দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দায়িত্ব দেওয়া হয়।
হঠাৎ ইউনিয়নের ২টি ওয়ার্ডে থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদককে না জানিয়ে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতারা ওয়ার্ড কমিটি দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন থানা আওয়ামীলীগের নেতারা। এতে মঙ্গলবার (৭ মার্চ) চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কাশেম চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওহাব তাদের নিজস্ব ফেজবুক পেইজে চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটিকে কোনো ধরণের পূর্ব নোটিশ ছাড়াই সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির একটি চিঠি প্রকাশ করেন। এতে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক বহিস্কৃত সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আমিনকেও সদস্য করা হয়। ফলে পূর্বের কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গিয়াস উদ্দিন লিঠন ও সাধারণ সম্পাদক কাজী সোলায়মান ওইরাতে তাদের অনুসারীদের বিক্ষোভ মিছিল করে। বুধবার (৮ মার্চ) সন্ধ্যায় উভয়পক্ষ পুনরায় তাদের অনুসারীদের নিয়ে মিছিলের আয়োজন করেন।
স্থানীয় লোকজন ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বুধবার সন্ধ্যায় ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আমিনের নেতৃত্বে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সমর্থকরা তাদের দুই থেকে আড়াইশ অনুসারী নিয়ে চন্দ্রগঞ্জ বাজারে আনন্দ মিছিল বের করে। এ দিকে একই সময় চলমান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী সোলায়মানের নেতৃত্বে তারাও দুই তিনশ’ কর্মী সমর্থক নিয়ে বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করে।
চেয়ারম্যান নুরুল আমিন সমর্থকরা মিছিল শেষ তারা আফজাল রোডের মোড়ে জড়ো হয়ে বক্তৃতা করেন। এসময় চন্দ্রগঞ্জ থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এম মান্দ্রুর রহমানের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের পূর্বের কমিটির অনুসারীরা দলবদ্ধ হয়ে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে আফজাল রোডের মোড় হয়ে বাজারের দিকে আসতে চাইলে দুইপক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল বিনিময় হয়। এতে দুইপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। একপর্যায়ে তাদের উভয়পক্ষকে নিভৃত করতে গিয়ে দুইপক্ষের লোকজনের ইটপাটকেল নিক্ষেপে পুলিশের ৫ সদস্য আহত হন। সংঘর্ষে জড়িতরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। ফলে ত্রিমুখী সংঘর্ষ শুরু হয়। প্রায় একঘন্টা ব্যাপী সংঘর্ষে পুলিশসহ উভয়পক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হন। পরে লাঠিচার্জ করে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
চন্দ্রগঞ্জ থানার ওসি তহিদুল ইসলাম বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাজারে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। অভিযান চালিয়ে অন্তত ১২ জনকে আটক করা হয়েছে।