ডিসেম্বরের শেষ দিকে উদ্বোধন হতে যাচ্ছে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত দেশের প্রথম সুড়ঙ্গপথ বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণ প্রকল্প। উদ্বোধনের পর ফেব্রুয়ারিতে শুরু হতে পারে যানবাহন চলাচল। নিরাপত্তার স্বার্থে শুরুতে যানবাহন চলাচল উন্মুক্ত রাখার বিষয়ে রক্ষণশীল অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ)। কিন্তু প্রকল্পের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ ও উদ্দেশ্য সফল করতে থ্রি-হুইলার, মোটরসাইকেল, গ্যাসচালিতসহ ১৪ ক্যাটাগরির যানবাহন প্রবেশের সুযোগ রাখা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গিয়েছে, দেশের অন্যতম বড় ও নান্দনিক স্থাপনা পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর মোটরসাইকেল চালকদের বেপরোয়া গতির বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে আসে। এরপর সাময়িকভাবে পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ রাখা হয়। টানেলের নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে এলে যানবাহন চলাচল ও টোল হার নির্ধারণের বিষয়ে একটি কমিটিও গঠন করা হয়। কমিটি শুরুতে মোটরসাইকেল, থ্রি-হুইলারসহ গ্যাসচালিত যানবাহন ছাড়াই টানেলে যানবাহন চলাচলের টোলের খসড়া তৈরি করে। টানেল নদীর তলদেশে নির্মিত অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা হওয়ায় নিরাপত্তার স্বার্থেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। কিন্তু সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে মোটরসাইকেলসহ গ্যাসচালিত যানবাহনের জন্য টানেল উন্মুক্ত রাখতে নির্দেশনার প্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত নেয় সেতু কর্তৃপক্ষ।
টানেলের টোল হার পুনর্নির্ধারণ, যানবাহন চলাচলের ক্যাটাগরি নির্ধারণে চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি সেতু কর্তৃপক্ষের আওতাধীন সেতুগুলো, উড়াল সড়ক, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ছাড়াও টানেলের টোল হার নিয়ে কাজ করবে এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে দ্রুত একটি প্রতিবেদন প্রদান করবে। গত ১২ মে সড়ক পরিবহন ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের (সেতু বিভাগ) উপসচিব মো. আবুল হাসান দ্রুত সময়ের মধ্যে টোল হার নির্ধারণের বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রদানে নির্দেশনা দেন। কমিটি কয়েক দফায় বৈঠক করে যানবাহনের ক্যাটাগরি নির্ধারণসহ খসড়া টোল নির্ধারণ করে। এক্ষেত্রে শুরুতে গ্যাসচালিত যানবাহন, মোটরসাইকেল ও তিন চাকার যানবাহন চলাচলের বিষয়টি ছিল না। কিন্তু সরকারি নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে সব ধরনের যানবাহনের জন্য উন্মুক্ত রাখা হচ্ছে টানেল। তবে শাহ আমানত সেতুতে কৃষিকাজে ব্যবহূত যানবাহন চলাচলের বিশেষ অনুমতি থাকলেও টানেলের ক্ষেত্রে সেটি বাতিল করেছে সেতু কর্তৃপক্ষ।
কমিটির সদস্যরা জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম শহর থেকে টানেলের প্রবেশমুখের দূরত্ব অনেক বেশি হওয়ায় স্বল্প মেয়াদে এ টানেল দিয়ে যানবাহন চলাচলের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে। এ কারণে শুরুতে রাখা না হলেও মোটরসাইকেলসহ সব ধরনের যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত রাখা হচ্ছে টানেল। তবে উদ্ভূত পরিস্থিতি, নিয়মের ব্যত্যয় ঘটলে মোটরসাইকেলসহ ক্যাটাগরি অনুযায়ী যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়ার নির্দেশনা রাখছে সেতু কর্তৃপক্ষ।
এদিকে টানেল নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের শেষ পর্যায়ে এসে প্রকল্পটির উপযোগিতা নিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে বিবিএ। কর্ণফুলী নদীর ওপর বিদ্যমান শাহ আমানত সেতু দিয়ে কক্সবাজারসহ চট্টগ্রামের দক্ষিণাঞ্চলে যায় যানবাহন। যার কারণে দূরত্ব বেশি হওয়ায় এবং টোল হার বেশি হলে টানেল দিয়ে যানবাহন চলাচল প্রাক্কলনের চেয়েও কম হবে বলে ধারণা করছে বিবিএ। শাহ আমানত সেতু দিয়ে চলাচলকারী যানবাহনগুলোকে এক যুগ আগে নির্ধারিত টোল পরিশোধ করতে হয়। এজন্য টানেল দিয়ে যানবাহন চলাচলে টোলের হার শাহ আমানত সেতুর সঙ্গে সমন্বয় করে রাখার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। পাশাপাশি সব ধরনের যানবাহন টানেল দিয়ে চলাচলের মাধ্যমে প্রকল্পের উপযোগিতা লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বাস্তবায়নের চিন্তা করছে সেতু কর্তৃপক্ষ।
জানা গিয়েছে, টানেল দিয়ে যানবাহন চলাচল স্পর্শকাতর হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে উভয় পাশে শক্তিশালী স্ক্যানার বসানো হবে। এক্ষেত্রে গ্যাসচালিত যানবাহন চলাচলে বিস্ফোরণে টানেলের ক্ষতি হবে মারাত্মক। এছাড়া মোটরসাইকেল চলাচলে দুর্ঘটনা ঝুঁকি ছাড়াও টানেলের অভ্যন্তরে অতিরিক্ত গতি ও মোটরসাইকেল থেকে নেমে ছবি তোলার প্রবণতা থাকে চালকের। অন্যদিকে থ্রি-হুইলার যানবাহনের অধিকাংশই গ্যাসচালিত হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই টানেল দিয়ে চলাচলের ক্ষেত্রে ঝুঁকি থাকে। এক্ষেত্রে চট্টগ্রাম শহর থেকে কর্ণফুলী নদী পার হতে যাওয়া যানবাহনের অধিকাংশই সিএনজিচালিত অটোরিকশা হওয়ায় থ্রি-হুইলার যানবাহনকেও টানেলে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন সেতু বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।