1. info@www.durjoynews24.com : দূর্জয় নিউজ ২৪ :
রবিবার, ০১ অক্টোবর ২০২৩, ০৫:০৮ অপরাহ্ন
শিরোনাম:
চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী ‘ঢাকাইয়া’ আকবর লক্ষ্মীপুরে গ্রেফতার লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে ধ্বসে পড়েছে চার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন ব্রিজের তিনটি গার্ডার লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু লক্ষ্মীপুর ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুলে সবুজের স্বপ্ন মেলা লক্ষ্মীপুর পিডিবির নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে ডিসির নিকট অভিযোগ লক্ষ্মীপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সেই অধ্যক্ষ এখনও বহাল তবিয়তে! লক্ষ্মীপুর জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের অভিযানে লাইসেন্স‍বিহীন দুটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার সিলগালা লক্ষ্মীপুরে তিন দিনব্যাপী স্থানীয় সরকার উন্নয়ন মেলার উদ্বোধন সমাজের বাস্তব চিত্র তুলে ধরলে মানুষ সাংবাদিকদের সম্মান করে: এমপি নয়ন রামগতিতে জোড়া খুন মামলার আসামী গ্রেফতার

গরুর রচনা’র ভাব সম্প্রসারণ

  • প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ৩১ আগস্ট, ২০২৩
  • ১১০ বার পড়া হয়েছে

ছাত্রজীবনে গরুর রচনা পড়েননি-এমন শিক্ষার্থীর সংখ্যা নেই বললেই চলে। আগে মাধ্যমিক পর্যায়ে গরুর রচনা পড়ানো হতো, এখন প্রাথমিক স্তরেও পড়ানো হয়।
আমি তখন ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র। নজরুল আমার সহপাঠী ছিল। আমরা একই শ্রেণীর ছাত্র ছিলাম। সে এক সময় আমার ছোট মামার সাথে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। মাঝখানে তার কয়েক বছরের শিক্ষা বিরতি। পরে আবারো ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হয় নজরুল। লেখা পড়ার প্রতি তার প্রচন্ড আগ্রহ ছিল। শ্রেণীকক্ষে পাঠদানের সময় স্যারকে সে বার বার প্রশ্ন করতো। সব কিছু সে বুঝে নেবার চেষ্টা করতো। ঘন্টা বাজার সাথে সাথে স্যার ক্লাসে না আসলে সে লাইব্রেরীতে গিয়ে স্যারকে ডেকে আনতো। পাঠশালা ছুটির পর বাড়িতে গিয়েও লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করতো। কিন্তু তার স্মরণশক্তি কম ছিল বিধায় সে কোন কিছুই সহজে মুখস্ত করতে পারতো না। শ্রেণীকক্ষে পাঠ উদ্গীরণ করতে না পারলে শ্রেণী শিক্ষক তাকে মাঝে মাঝে বেঞ্চের উপর দাঁড় করিয়ে রাখতো। বেঞ্চের উপর দাঁড়িয়েও সে বই পড়তো। নজরুল ছিল কিছুটা খাটো প্রকৃতির। সে পূর্বে আমার মামার ক্লাসমিট ছিল বিধায় আমি দুষ্টুমি করে তাকে গিট্টু মামা বলে ডাকতাম।

একদিন হাসান স্যার শ্রেণীকক্ষের সকল শিক্ষার্থীকে গরুর রচনা লিখতে দিয়েছিল। গিট্টু মামা দাঁড়িয়ে স্যারকে প্রশ্ন করল: স্যার, কোন গরু দিয়ে রচনা লিখব? গাভী না বলদ? তখন স্যার বলল, গাধা কোথাকার। সে আবারো বলল, আমাকে কিছু বললেন স্যার? স্যার বললেন, তোমাকে না-তোমার বাবাকে বলেছি। এরপর স্যার বললেন, বলদ গরু দিয়ে কি কেউ রচনা লিখে? রচনা’তো সবাই গাভী দিয়েই লিখে। আমরা সবাই অপেক্ষায় ছিলাম-স্যার এবং গিট্টুর মধ্যকার বিতর্কে কোন গরু দিয়ে রচনা লিখার সিদ্ধান্ত হয়। সর্বশেষে স্যারের সিদ্ধান্তে গাভী দিয়েই রচনা লিখা শুরু হয়। গরু আমাদের দুধ দেয়। গরুর দুধ পুষ্টিকর পানীয়। গরুর দুধ দিয়ে অনেক ধরনের মিষ্টি, ছানা, পায়েস তৈরী করা হয়। গরু প্রতি বছর একটি করে বাছুর জম্ম দেয় ইত্যাদি ইত্যাদি যার যার মত করে লিখে সকলে স্যারের টেবিলের উপর খাতা জমা দিতে থাকি। কিন্ত গিট্টু মামার রচনা লেখা শেষ হচ্ছিলনা, সে লিখেই যাচ্ছিল। স্যার বললেন, নজরুল তোমার আর কত দেরী? সে বলল, আর একটু স্যার। এই বলে সে লিখেই যাচ্ছে। এরি মধ্যে স্যার সকলের খাতায় চোখ বুলিয়ে ১০ নাম্বারের মধ্যে কাউকে ৮, কাউকে ৭ যে যতটুকু লিখেছে তার খাতায় ততটুকু নাম্বার বসিয়ে দেন। স্যার আবারো নজরুলকে উদ্দেশ্য করে বলেন, তোমার এখনো হয়নি? তৎক্ষণাৎ স্যারের সামনে খাতা নিয়ে যায় নজরুল। স্যার খাতা নিয়ে দেখতে শুরু করেই নজরুলকে আবারো ডাক দিলেন। নজরুল দাঁড়িয়ে যায়। স্যার জিজ্ঞাসা করেন; এটা তুমি কি লিখেছ? গরুর কি ৩২টি দাঁত হয়? জবাবে নজরুল বলল, স্যার আমি তা কখনো গুণে দেখিনি। আমাদের থাকলে গরুর থাকবেনা কেন? তারপর স্যার তাকে পরদিন গরুর দাঁত গুণে আসার পরামর্শ দিয়ে আবারো নজরুলের খাতা দেখতে শুরু করেন। স্যার আবারো চেঁচিয়ে নজরুলকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি এটা কি লিখেছ? গরুর দুধ পুষ্টিকর পানীয়; এ পর্যন্ততো ঠিক ছিল, পরে দুধের সাথে পানি মেশানোর কথা কেন লিখেছ? তখন নজরুল অনর্গল বলতে শুরু করল- স্যার গরুর দুধ এক সময় পুষ্টিকর পানীয় ছিল। এখন আর আগের মত গরুর দুধে কোন পুষ্টি নেই, দুধের সাথে পুকুর ও খাল-বিলের পানি মেশানোর কারণে বাজার থেকে দুধ কিনলে দুধের সাথে মাঝে মধ্যে বিভিন্ন প্রজাতির ছোট মাছও পাওয়া যায়। পাউডার দুধ ও ক্যামিকেল দিয়ে দুধ তৈরী করা হয়। আবার সয়াবিন দিয়েও দুধ তৈরী করে গরুর দুধের সাথে মিশিয়ে গরুর দুধ হিসেবে বাজারে বিক্রি করা হয়। সে কারণে দুধের মধ্যে আগের মত পুষ্টি পাওয়া যায়না বিধায় এখন অনেকেই বাজার থেকে গরুর দুধ কিনেন না।
হাসান স্যার নজরুলকে বকাঝকা দিয়ে বলেন, গাভী তো আর ভেজাল দুধ দেয়না। যদি কেউ দুধে ভেজাল মেশায় তাহলে স্যানেটারী ইন্সপেক্টর দুধ পরীক্ষা করে সেগুলো ফেলে দেবে, দুধ বেপারীর জরিমানা করবে। স্যারের সে কথায়ও নজরুলের ঘোর আপত্তি। তার মতে দুধ বেপারীদের সাথে স্যানেটারী ইন্সপেক্টরের মাসিক চুক্তি থাকে। তারা দুধ বেপারীদের নিকট থেকে মাসোহারা আদায় করেন। যার কারণে ভেজাল দুধ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়না। এরই মাঝে ৪র্থ ঘন্টার সময় শেষ হওয়ায় স্যার প্রসঙ্গ শেষ করে শ্রেণীকক্ষ ত্যাগ করেন।

হাসান স্যার ও নজরুলের সেদিনের সংলাপ একটু বিশ্লেষণ করলে আমরা অভিযোগের সত্যতা বাস্তবে দেখতে পাই। বাজারে এখন আর খাঁটি দুধ পাওয়া যায়না বললেই চলে। লক্ষ্মীপুরের দুধের বাজারে সকাল থেকে শুরু করে দুপুর- বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত দুধ বিক্রি করতে দেখা যায়। কোথা থেকে আসে এত দুধ? সেটি শুধু আমার একার নয়- অনেকের প্রশ্ন। বড় বড় কন্টেইনার ভর্তি দুধ নিয়ে বেপারীদেরকে কাষ্টমারের জন্য অপেক্ষমাণ থাকতে দেখা যায়। এক কন্টেইনার খালি হলে আরেকটি পেছন থেকে সামনে নিয়ে আসা হয়। আমি দুপুরে অফিস থেকে বাসায় যাবার পথে মাঝে মাঝে দুধের বাজারে প্রবেশ করি। খাঁটি দুধ আছে কি না একে একে সকলকে জিজ্ঞাসা করি। কিন্তু মাথা নেড়ে একে একে সকলেই না সুচক জবাব দেয়। তারপর ভরসা প্যাকেটজাত তরল দুধ। প্যাকেটের ভিতরে কি আছে? মানসম্মত কিনা-তা জানার সুযোগ নেই বিধায় চোখ বুঝে সেটি কিনতে হয়। তবে দুধের বাজারে এত জালিয়াতি চললেও সেখানে তদারকির দায়িত্বে কেউ রয়েছে বলে মনে হয়না।

এবার আজকের মূল প্রসঙ্গে ফিরে আসি। প্রকৃতপক্ষে আমরা সেকেলে পদ্ধতিতে গ্রামের পাঠশালায় যারা লেখাপড়া করেছি- তারা গরুর রচনা পড়েছি, লিখেছি। শহরাঞ্চলের ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল সমূহে তখন গরুর রচনা পড়ানো হতো কিনা তা আমার জানা নেই। তবে আমরা কখনো গরুর রচনা লিখতে গিয়ে গাভী বা বলদ এর মধ্যকার পার্থক্য নিয়ে কখনো ভাবিনি। নজরুলের স্মরণশক্তি কম হলেও সে বলদ এবং গাভীর মধ্যে পার্থক্য অনুভব করেছে। নজরুল সেদিন একটি কঠিন বাস্তবতাকে সামনে তুলে এনেছিল। যদিও সেদিন গরুর রচনা লিখতে গিয়ে সে গাভী ও বলদের পার্থক্য উপস্থাপন করায় আমিও তার প্রতি বিরক্ত বোধ করেছিলাম। আজকের বাস্তবতায় তাকে শ্রদ্ধা করতে ইচ্ছে করছে এই জন্য যে, একটি বাস্তব সত্যকে সামনে তুলে এনে গিট্টু মামা আমাদের বন্ধ চোখ খুলে দিয়েছিল।

‘গাভী’ যাকে নিয়ে দেশের লাখ লাখ শিক্ষার্থী যুগের পর যুগ গরুর রচনা লিখে আসছে। গাভীর উপকারিতা নিয়ে ৫, ১০ বা তদুর্ধ পয়েন্টে গরুর রচনা লিখা হয়। যে যত পয়েন্টে রচনা লিখুন না কেন-তার সাথে আমি আরও একটি পয়েন্ট যোগ করে বলতে পারি গাভীর মাংস নরম বিধায় এর স্বাধও খুব বেশী।

এবার বলদ নিয়ে যদি রচনা লিখতে দেয়া হয় তাহলে বলদ দুধ দেয়না, বংশ বিস্তার করেনা। তার জন্য খড়কুটো ছাড়া কাঁচা ঘাসের কোন ব্যবস্থা নেই, বলদকে কেউ চরাতে নেয়না, সারাদিন খড়ের গাদায় বেঁধে রাখে ইত্যাদি ইত্যাদি।
এবার যদি বলদের উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করি তাহলে হাল চাষ ছাড়া বলদ অন্য কোন কাজে ব্যবহার হয়না। বলদের মাংস শক্ত এবং এর স্বাধও অপেক্ষাকৃত অনেক কম।

আজকাল দেশের কৃষকরা পাওয়ার টিলার দিয়ে জমি চাষ করেন বিধায় বলদ এখন একেবারেই নিস্প্রয়োজনীয় বস্তুতে পরিণত হয়েছে। বসিয়ে বসিয়ে বলদ লালন পালন করতে এখন আর কেউ স্বাচ্ছন্দবোধ করেন না।

অর্থের প্রয়োজনে মানুষ শতভাগ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মহাকাশে পাড়ি জমাচ্ছে। কেউ পাড়ি দিচ্ছে সাগর -মহাসাগর। আজ যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গাভীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে অর্থ উপার্জন করে নিজে সমৃদ্ধ হচ্ছেন পাশাপাশি দেশকেও সমৃদ্ধ করছেন, সে সময়েও এক শ্রেণী এখনো বলদী ভূমিকায় রয়ে গেছেন। দু’ চোখ বুঝে কাজ খুঁজে পান না তারা। আরেক শ্রেণী কাজের ব্যস্ততায় বিশ্রাম দূরে থাকুক, ঠিকমত আহার করারও সময় পান না। সরকারি/ বেসরকারী কর্মক্ষেত্রে অনেককে অলস সময় কাটাতে দেখা যায়। তাদের কথার ফুলঝুরি কোন অংশে কম নয়। অনেকটা কাজে ঠনঠন কথায় ভনভন এর মতো অবস্থা। অনেককে কাজ নেই অযুহাতে হোটেল-রেস্টুরেন্টে বসে থাকতে দেখা যায়। আবার কাউকে কাউকে সরকারি/ বেসরকারি কর্মক্ষেত্রে এসি/ ফ্যান, লাইট জ্বালিয়ে বসে বসে ফেইসবুক চালাতে কিংবা অযথা খোশগল্প করে অলস সময় কাটাতে দেখা যায়। তাদের টেবিল থেকে ফাইল সহজে নড়েনা, স্বীয় দায়িত্বও তারা যথাযথভাবে পালন করেন না। দায়িত্ব কি জিনিস তারা সেটি সহজে বোঝেন না। বলদ প্রকৃতির এই শ্রেণী চাপাবাজীতে একদম পারদর্শী। নিজে কিছু করেন না কিন্তু বসে বসে অন্যের ত্রুটি খোঁজেন, সমালোচনা করে বেড়ান। দুর্নীতি লালন করেন, দুর্নীতিবাজদের মদত দিয়ে কমিশন নেন। এরা গাভী নয় বলদ। স্বাধীনতার ৫২ বছর পর একটি উন্নয়নশীল দেশে বলদের কোন প্রয়োজন নেই বলে অনেকে মনে করেন। কাজেই সর্বক্ষেত্র বলদ মুক্ত করে গাভীর ক্ষেত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। যাতে আমাদের অনাগত ভবিষ্যত বংশধররা গরুর রচনা লিখতে গিয়ে ‘গরু আমাদের দুধ দেয়, প্রত্যেক বছর একটি করে বাছুর দেয়, গরু পালন করে গোয়ালা উপকৃত হন- এভাবে যেন লিখতে পারে। তাতেই সর্বক্ষেত্রে প্রাপ্তি, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত হবে।

লেখক: সাবেক সভাপতি, লক্ষ্মীপুর প্রেসক্লাব।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো খবর

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০৩১  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: : ইয়োলো হোস্ট